-শুনেছি সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন কেউ যদি সবুজ গাছের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাহলে তার চোখের জ্যোতি বেড়ে যায়, চোখে প্রশান্তি আসে । কিন্তু যতটুকু দেখেছি এই সবুজ শুধু চোখেই সতেজতা নয় মনেও আসে স্থিরতা , ফোকাস করার ক্ষমতা বেড়ে যায় । উৎফুল্লতা আসে । আসে উদ্দীপনা । ঘুম ভেঙ্গে সবুজ গাছের দিকে একমনে তাকিয়ে দেখুন সত্যিই আপনার মনে বহু পজিটিভ সেন্স সৃষ্টি হবে । যত বেশি সবুজ তত বেশি বিশুদ্ধতা । তত বেশি সুস্থতা ।
-কিন্তু আমাদের শহুরে জীবনে সবুজ পাওয়া ততটা সহজ নয় । চারিদিকে ইট কাঠের ভবন । বহুতল সব ভবনগুলো । উঠেছে, উঠছে, উঠবে । অধিকাংশই পরিকল্পনাবিহীন বহু পুরনো এবং ক্রমশও বেড়ে গিয়ে বিশাল মেগা সিটিতে রুপ নেওয়া এই শহরটির কয়টি বাড়িতেই বা মন ভালো করে দেওয়া সবুজ পাওয়া যাবে । আরও দুটো পয়সার ইচ্ছায় এক ইঞ্চি জায়গাও কেউ ছেড়ে দিতে রাজি নয় প্রকৃতির জন্য । ভাগ্যবান ও রুচিশীল কিছু মানুষ ছাড়া আর প্রায় সকলকেই এপার্টমেন্ট ভবনের বারান্দা বা বেল্কনিতে সবুজকে আনার চেষ্টা করেন । কেউ কেউ ঘরেও মানানসই গাছ সাজিয়ে রাখেন । বনসাই, অর্কি্ড, পাতাবাহার, মানিপ্ল্যান্ট ইত্যাদি গাছগুলো ঘরে ভালোই লাগে ।
– ফ্ল্যাট বাড়িতে সবার কিন্তু আবার বারান্দা থাকেনা । তাই ইচ্ছে হলেও গাছ লাগানো সম্ভব হয় না । একফোঁটা সবুজের তৃষ্ণায় অনেককেই দেখিছি জানালায়ও দু একটা ছোট টব রাখেন । মানিপ্ল্যান্ট বা অর্কিড জাতীয় গাছকে প্রাধান্য দেন । মানিপ্ল্যান্ট গাছ নিয়ে একটি মজাদার মিথ শুনেছি যে, কেউ যদি মানিপ্ল্যান্ট গাছের একটি ডাল গাছের মালিকের অজান্তে ছিঁড়ে এনে ঘরে বা বাগানে লাগায়, তাহলে সেই লাগানো গাছটি যত বাড়বে সেই ব্যাক্তির টাকা বা সম্পদ তত বাড়বে । হা হা হা – কথাটা যদি সত্য হতো তাহলে বাংলাদেশের দারিদ্রতা সহজেই দূর করে দেওয়া যেতো । প্রধানমন্ত্রীকে আর এতো কষ্ট করে এতো প্ল্যান প্রোগ্রাম করে দেশকে উন্নয়নশীল থেকে ধনী দেশে রুপান্তরিত করার জন্য লড়তে হতোনা সকল প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে । তখন বিল পাশ হতো –প্রিয় দেশবাসী আপনারা দয়া করে একটু কষ্ট করে কোথাও থেকে মানিপ্ল্যান্ট ডাল জোগাড় করে লাগিয়ে নিন । এই কাজে ধনী হবার জন্য এক বছর সময় দেয়া হোল । এক বছর পর যদি কোন গরীব খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে এটাই ভেবে নেওয়া হবে যে আপনি সরকারের নিয়ম পালনে গাফিলতি করেছেন । অতএব আপনি এখন কাঠ গড়ায় । অর্ডার অর্ডার, আপনাকে এই মর্মে—- এই দণ্ডবিধি মতাবেক—-এই শাস্তি —-। জাস্ট ফান । এ কথা শুনে গাছ কষ্ট পেতে পারে । এবং সেই মানুষগুলো যাদের ক্ষেত্রে সত্যিই এমনটা হয়েছে বলে তারা মনে করেন ।
– আমার সকল কথার পেছনে গাছের উপকারিতার কথাই মুখ্য । পরোক্ষ আর প্রত্যক্ষ সকল ক্ষেত্রেই গাছের সর্বোচ্চ অবদান । আজকাল ছাদের বাগান মানুষকে খুব উৎসাহী হয়ে করতে দেখা যায় । এই সৌভাগ্যটুকু শুধুমাত্র ভবনের মালিকের থাকে । আমাদের মেয়র সাহেবরা রাজধানীকে সবুজ করতে বেশ কিছু চমৎকার পদক্ষেপ নিয়েছেন । উনারা ঢাকা সবুজ নগর করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন । একদিকে যেমন ঢাকার তাপমাত্রা বাড়ছে , ওপর দিকে সবুজ কমছে । আশপাশের এলাকার চেয়ে ঢাকার তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বেশি হওয়ায় গ্রীষ্মকালে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে । ঢাকার দুষিত বাতাসের কারনে শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ । বিশেষ করে শিশুরা বেশি ভুগছে । মেয়ররা প্রতি বাড়ির ছাদে ও বারান্দায় গাছ লাগানোর পরামর্শ ও সাহায্য করে যাচ্ছেন । পুরনো ঢাকার পোস্তগোলা থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত এলাকাকে হাতির ঝিলের মতই শুধু না লন্ডনের টেমস নদীর তীরের মত করে সুন্দর পার্ক তৈরি করে সবুজে ভরে দেবেন । দক্ষিনের মেয়রের পদক্ষেপটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য । যখনই এটা ভাবছি মনে মনে বলছি – ‘আরে, বাহ !!’
– এছাড়াও রাস্তার আশেপাশে, পার্কের খালি জায়গা, ফ্লাইওভারের নিচে ও বাড়ির ছাদে যদি মেয়ররা গাছ লাগানো হয়েছে । এভাবেই এই মেগা সিটিকে আরও সুন্দর করতে সবুজ করতে অনেক কাজই করেছেন উনারা ।
-এ বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিশু কিশোর সহ সকল মানুষকে ভালোবেসে দায়িত্ব নিয়ে এ শহরকে সুন্দর করার প্রচেষ্টায় হাত লাগায় তাহলে রাজধানির সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বড় উপকার হচ্ছে পরিবহন শিল্পকারখানা থেকে নিঃসৃত কার্বন সহনীয় পর্যায়ে এসে যাবে । কার্বনডাইঅক্সাইডের কারনে সৃষ্ট ক্ষতিকর দিকগুলোও হ্রাস পাবে ।
-পরিবেশ রক্ষায় এই অতিপ্রয়োজনীয় অবশ্যকর্তব্য কাজটি করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগুতে হবে । আমার দেশের আমার রাজধানীর এবং আমার পরিবার ও পরিবেশকে রক্ষার দায়িত্ব তো আমারই ।
প্রিয় গাছ
জলন্ত সূর্য মাথার উপর-
উত্তাপে জ্বলছে, হাঁটছে আর হাঁটছে সে তো শ্রান্ত পথিক,
ঘামছে পুড়ছে ভাবছে — দুখে মন ভেঙ্গে গেল যেই-
ওই তো একটি গাছ ডালপালা ছড়িয়ে দূরে আছে দাড়িয়ে,
ক্লান্তির শেষ ধাপে গাছের ছায়ায় এসে বসলো।
ভালোলাগা আবেশে হেলান দিয়ে চোখ বুজলো।
উত্তাপে জ্বলে যাওয়া এ শরীর নেতিয়ে পড়েছে দেহখানি,
গ্রীষ্মের খর তাপ এভাবেই পোড়াবে সকল দিনমানই।
কি করে কি করে সে বিধির আশিস যেন
ঝুপ করে পদপাশে এ যে পাকা আম ,
সুমিষ্ট সেই আম পরান জুড়িয়ে দিল শান্তি অনেক হোল প্রানে,
উপরে তাকিয়ে দেখে ফল ভরা আমগাছ চারিদিক ভরা ফল ঘ্রানে।
একদিন কোন এক সুধিজন, সজতনে লাগিয়েছে এক আম চারা,
আজ সেই চারা গাছ বৃক্ষ হয়ে, ছড়িয়েছে ডালপালা দিগন্ত জোড়া।
কেউ যদি কোনদিন লাগাতোনা এই গাছ পেতো কি সে গাছের ছায়া,
এটা নয় শুধু সকল সবুজ গাছ যেন এক উপকারী কায়া।
আমাকে বাঁচাবে গাছ, আমিও বাঁচাবো গাছ—
গাছ আমি সখ্য মিতালী,
মানবের বন্ধু অশেষ দিয়েছে
ভোরেছে দানে অঞ্জলী।
তুমি দাও ঔষধ তুমি দাও প্রসাধন
তুমি দাও আমাকে আহার,
ফুলের সুবাস দাও হাজারো রঙের
রঙিন পাতায় ভরা পাতার বাহার।
নিঃশ্বাস ফেলি সেতো তুমি আছ তাই,
তারপরও তোমাকে পোড়াই
তোমাকেই কেটে চিরে কত কিছু বানিয়ে,
আমাদের জীবন সাজাই।
তুমি ছাড়া একেবারে মিথ্যে জীবন
তুমি হোলে সত্য সাথী,
তুমি ছাড়া সব রঙ হারিয়ে যাবে,
তুমি যেন জীবন বাতি।
কেউ যদি কেটে ফেলে কোথাও একটি গাছ
হৃদয়ে দরদ মায়া জাগিয়ে,
পূর্ণ কোরে দিয়ো সে অভাবখানী,
অনুরোধ- চার চার গাছ লাগিয়ে।
পৃথিবী শোন—
গাছ এত কেটো না লাগাও চারা সবুজে সবুজে ভরে দাও,
শত দান প্রতিদান পাবে প্রতিক্ষণ ধরণীকে বাঁচাও বাঁচাও ।
পরিবেশ রক্ষায় এই অতিপ্রয়োজনীয় অবশ্যকর্তব্য কাজটি করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যেতে হবে । আমার দেশের, আমার রাজধানী, আমার এলাকার, আমার পরিবার ও পরিবেশকে রক্ষার দায়িত্ব তো আমারই । মানবতার জয়গান, সভ্যতার বিনির্মাণ, সুস্থ্যতার আহ্বান, সৌন্দর্যের প্রতিস্থাপন ও জলবায়ু পরিবর্তনে এ কাজে আর এ কাজের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে পুরো পৃথিবীকেই ।