আমাদের দেশ আর পর্শবর্তী দেশ ভারতের সাথে আমাদের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক কেমন তা আমরা দেশের মানুষ সবাই জানি। নতুন করে তা জানার কিছু নেই। তবে আজ যা নিয়ে লিখবো তা হলো আমাদের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু দিন আগে ভারত সফরে গিয়ে তিস্তার পানি চুক্তির কি সমাধা করলেন তার খুঁটিনাটি।
সেই ১৯৭১ সাল থেকে ভারত সবসময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সত্যি বলতে ভারত আমাদের দেশের পাশে ঠিক কতটা দাঁড়িয়েছে তা নিয়েই আমার সন্দেহ আছে। সত্যি কি তারা সাহায্যের জন্যে পাশে এসে দাঁড়ায় নাকি ভবিষ্যৎ যতদিন আছে আমাদের শোষণ করে যাবে সেই ধান্ধা। তবে ভারতের চিন্তা যাই হোক আমাদের সরকার তাদের সাথে ঠিক কেমন ব্যবহার। করছে সেটাই মূলত দেখার বিষয়।
ইদানিং কালে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকাগুলো দেখলে আমরা বুঝতে পারবো ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক শান্তিপ্রিয় হয়েই আছে। এই যেমন ধরুণ সন্ত্রাসবাদ। দুদেশ একত্রে খুব সাহসিকতার সাথে সন্ত্রাসবাদকে বন্ধ করতে প্রায় সমান ভাবে সোচ্চার। এমনকি বর্ডার দিয়ে যেন সন্ত্রাসীরা অতিক্রম করে কোন দেশের ক্ষতি করতে না পারে তাই দুদেশের সিমান্তে খুব কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও খুব নতুন একটা ইস্যু জঙ্গি। দুদেশ এই জঙ্গিবাদ কে রুখতে একদম বন্ধুর মতো সহযোগিতা করছে। আর দুদেশের মধ্যে একরকম যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে তা অত্যন্ত সুশীল।
এছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত ও আমাদের দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কও অনেক গভীর। প্রতি বছর ঠিক যে পরিমান আমদানি ও রপ্তানি দুদেশের মধ্যে হয় তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিষ্ট বাংলাদেশে ব্যপক পরিমাণে বিনিয়োগ করে যা আমাদের দেশের ইকোনমি বেশ অনেকটা প্রসারিত করেছে।
তবে ভারত বাংলাদেশকে অনেকটা কোণঠাসা করে রাখতে চায়। এই যেমন ধরুন বাংলাদেশ যখন সাবমেরিন কিনলো তখন ভারত অনেকটা নাক ছিটকানো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশ কেন সাবমেরিন কিনবে? বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে সাবমেরিনের কি প্রয়োজনীয়তা আছে ইত্যাদি ইত্যাদি।এ থেকে অনেকটা বুঝা যায় বাংলাদেশ সামরিক দিক দিয়ে উন্নত হোক এটা তারা হতে দিতে চায় না। তবে আমাদের দেশ সামরিক শক্তিতে এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এখন অনেক শক্তিশালী। এছাড়াও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর অবদান বিশ্বের দরবারে প্রশংসার দাবি রাখে।
এবার চলুন বাংলাদেশের পানি নিয়ে আলোচনায় আসা যাক। আমাদের দেশের ভিতর দিয়ে অসংখ্য নদী প্রবাহিত হয়ে গেছে। যার মধ্যে অন্যতম এক নদী হচ্ছে তিস্তা। তিস্তা নদীর উৎপত্তি হিমালয়ের সিকিমে ৭২০০ মিটার উচ্চতায় চিতামু হ্রদে। এটাই মূলত তিস্তার মাতৃগর্ভ। এরপর এটি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে তিস্তার মূল প্রবেশপথ নীলফামারী জেলার কালীগন্জ। এছাড়াও তিস্তা বাংলাদেশের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ছাড়াও আরো প্রায় ৩৫টি উপজেলা ও প্রায় সাড়ে ৫০০০ গ্রামের ভিতর দিয়ে তিস্তার শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত। দেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের জীবন তিস্তাকে কেন্দ্র করে যাপিত হয়। তাদের মূল কাজ কৃষি এবং এর সব ধরণের সেচ কাজ থেকে শুরু করে অন্ত পর্যন্ত পুরোটাই তিস্তার পানির ওপর নির্ভর করে অতিবাহিত হয়। তবে বাংলাদেশ এই তিা্তা নদীর ঠিক যতটুকু পানি পায় ভারত তার চেয়ে বেশি পানি নিজেদের হিসেবে দাবি করে এবং এটা নিয়েই ভারতের সাথে আমাদের দেশের মূল অমিল।
ঐ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়। সর্বপ্রথম ১৯৮৩ সালে তিস্তার পানি নিয়ে দুই দেশে আলোচনা শুরু হয়। বাংলাদেশ তিস্তা নদীর পানির প্রায় ৩৬ শতাংশ ও ভারত প্রায় ৩৯ শতাংশ দাবি করে বাকী পানি টুকু সংরক্ষিত হিসেবে রেখে মোটামুটিভাবে আলোচনা ধামা চাপা রিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। এদিকে ভারত তিস্তা নদীতে বাঁধ দিতে থাকে। যদিও আলোচনা শুরুর আগেই কিছু বাঁধ ভারতে তিস্তা নদীতে ছিল। সর্বমোট প্রায় ১০ টি বাঁধ রয়েছে গোটা ভারতে শুধুমাত্র তিস্তা নদীতেই। তবে ভারতের শেষ বাঁধ জলপাঁইগুড়ির গজলডোবা এলাকায় যা বাংলাদেশের ভিতর পানি প্রবেশ একেবারে প্রায় বন্ধ করে দেয়ার মতো অবস্থা করে রেখেছে।
এরপর থেকে এই ইস্যু নিয়ে ভারতের সাথে আমাদের সরকারের অল্পসল্প দরকষাকষি হতেই থাকে। ২০০৭ সালে ভারত বাংলাদেশ সমান দাবি নিয়ে মোটামুটি প্রায় ৮০ শতাংশ পানি বন্টনের কথা হয় এবং বাকিটা সংরক্ষণে রাখার দাবি করে দুইদেশ। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে বাধা জানায় মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় নিজে। ভারতের মন্ত্রীসভার অনেকেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা পোষণ করে। এসব করে ভারত আবার চুক্তি প্রায় বাতিল করে দেয় এবং আলোচনা আবার পুরো বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ২০১১ সালে এক অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির কথা তোলে ভারত। যাতে মোটামুটিভাবে ১৫ বছরের স্থায়ী কিছু সিদ্ধান্তের কথা আলোচনায় আনা হয়। যেখানে বলা হয় ভারত তিস্তার ৪২.৫ শতাংশ ও বাংলাদেশ প্রায় ৩৭.৫ শতাংশ পানি পাবে এবং বাকিটুকু সংরক্ষণ হিসেবে রাখা হবে। কিন্তু একইভাবে মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় পুনরায় বিরোধীতা করে। যেখানে ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় পুরো সময়টাতেই বাংলাদেশের মানুষজনকে এই তিস্তার পানির উপর নির্বর করতে হয়। বাংলাদেশের প্রায় ২৭৫০ বর্গ কিলোমিটার জমি এই তিস্তা নদী বেষ্টন করে আছে। দেশের প্রায় এক লক্ষ হেক্টর জমিতে যে কৃষি চাষ হয় তা পুরোতাই ঐ তিস্তার পার্শবর্তী এবং পুরোপুরিভাবে তিস্তার পানির ওপরে নির্ভর করেই কৃষিচাষ হয়ে থাকে।
এই যখন দুদেশে পানি বন্টনের অবস্থা তখন তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সরকার অবশ্যই পিছপা হবে না। তিস্তার পানি অবশেষে কোথায় গিয়ে পড়ে এটাই এখন দেখার বিষয়। আপনাদের মতামত অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
ছবি সূত্রঃ গুগল